“আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স” অথবা “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” ইদানিং এই ব্যাপারে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। এই লেখালেখির অধিকাংশই হচ্ছে “ইন্টিলিজেন্ট মেশিন” এর কাছে আমরা কিভাবে হেরে যাব অথবা “ইন্টিলিজেন্ট মেশিন” আমাদের তুলনায় অনেক বুদ্ধিমান হবে এতে আমরা অবসলিট (বিলুপ্ত) হয়ে যাব ইত্যাদি।
“ইন্টিলিজেন্ট মেশিন” / “আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স” বলতে আমরা কি বুঝি? অধিকাংশ মানুষের কাছে এটি হচ্ছে রোবট জাতীয় কিছু আবার অনেক কাছে এটি হচ্ছে মানুষের মত চিন্তা করতে সক্ষম কোন মেশিন অথবা প্রোগ্রাম আবার অনেকের কাছে “মানবীয় অনুভূতি” সম্পন্য মেশিন অথবা প্রোগ্রাম।
এবার দেখা যাক বুদ্ধিমত্তা বা ইন্টিলিজেন্স বলতে আমরা কি বুঝি? আপনি বুদ্ধিমত্তা বলতে কি বোঝেন? বুদ্ধিমত্তার প্রাথমিক সংজ্ঞা হচ্ছে যে কোন কিছু বুঝতে পারে, আত্ম-সচেতনতা আছে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যুক্তি বোঝে, শিখতে পারে এমন কোন প্রাণী অথবা যন্ত্র। আমরা আপাতত কেবল অল্পকিছু প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে জেনেছি, এর মধ্যে মানুষ, ডলফিন, বানর, এইপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা “মানুষের মত চিন্তা করতে সক্ষম” প্রোগ্রাম বানাতে চাচ্ছি, কিন্তু “মানুষের মত চিন্তা” ব্যাপারটি কি সেটা আমরা জানি না। আপনি কি হিটলার/মুসোলিনির মত চিন্তা করতে সক্ষম প্রোগ্রাম চান নাকি গান্দি/মেন্ডেলার মত চিন্তা করতে সক্ষম প্রোগ্রাম চান নাকি আইন্সটাইন/টেসলা/টুরিন এর মত চিন্তা করতে সক্ষম প্রোগ্রাম চান নাকি আপনার পরিচিত সবচেয়ে বোকা ব্যাক্তির মত প্রোগ্রাম চান ?
আমাদের “আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স” বানাতে চাওয়ার কারন হচ্ছে আমাদের নিজেদের জীবনযাপন সহজ করা। ঠিক এই জিনিশটিই আমরা করে আসছি আমাদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশের পর থেকে, আমরা একের পর এক আবিষ্কার করেছি, নিয়ম লিখেছি, প্রকৃতি থেকে জ্ঞান আহরন করেছ। এই সবই শুধুমাত্র আমাদের জীবনযাপন সহজ এবং উপভোগ্য করার জন্য।
একটি “সেলফ ড্রাইভিং” কার একজন মানব ড্রাইভারের তুলনায় ভালো ভাবে চলতে পারার কথা, কারন এই মেশিনটি যা ইনপুট নিচ্ছে তা সঠিক ভাবে এ্নালাইজ করে গাড়ীর স্পিড, ব্রেক, স্টিয়ার ইত্যাদি করতে পারার কথা। কিন্তু কেন এই মেশিন ঠিক ভাবে তা পারছে না? এর কারন হচ্ছে আমাদের আচরণ কোন পূর্বাভাস দেয় না, আমাদের মন চাইলে আমরা গ্যাস প্যাডেলে একটু জোরে চাপ দেই অথবা হুট করে লেন বদল করি অথবা ফোনে চ্যাট/কথা বলতে বলতে গাড়ী চালাই। এখন আমাদের “সেলফ ড্রাইভিং” কারের শুধু রাস্তার ডাটা নিয়ে কাজ করলেই হয় না, আমাদের আনপ্রেডিক্টিবিলিটি নিয়েও কাজ করতে হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের আনপ্রেডিক্টিবিলিটি তো প্রেডিক্ট করা যায় না তাই আপাতত আমাদের “সেমি-সেলফ ড্রাইভিং” কার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। “সেলফ ড্রাইভিং” কার একটি “ইন্টিলিজেন্ট মেশিন” যা কম্পিউটার ভিশন, প্যাটার্ন রিকগ্নিশন ইত্যাদি ব্যবহার করে পরবর্তী একশন ঠিক করে। আমাদের “সেলফ ড্রাইডিং” কারের কোন “মানবীয় অনুভূতির” দরকার নেই। আমরা যদি এতে “মানবীয় অনুভূতি” যুক্ত করি তাহলে আমাদের “সেলফ ড্রাইডিং” কার আমাদের মতই আচরণ করবে।
একটি “সেলফ ড্রাইডিং” কার তার চারপাশের সব দেখতে পায়, রাস্তার সামনে বাঁক থাকলে একজন মানুষের অনেক আগেই এই মেশিনটি সেটি দেখতে পায়। এই মেশিনটি তার পরবর্তী কয়েক ধাপের আপারেশন কি হবে সেটা আগেই ঠিক করে ফেলতে পারে। স্যাটেলাইট, ম্যাপ, GPS, ট্রাফিক প্যাটার্ন এর ডাটা এনালাইসিস করে মেশিনটি ডেস্টিনেশনের সবচেয়ে ভালো রুট পিক করতে পারে। এখন একজন মানব চালকের তুলনায় এই মেশিনটি কি বেশি বুদ্ধিমত্তার অধিকারী? এর উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ মেশিনটি গাড়ী চালানোর ক্ষেত্রে একজন মানব চালকের তুলনায় বেশি দক্ষ এবং বুদ্ধিমত্তার অধিকারী।
বুদ্ধিমত্তা সম্পন্য মেশিন এবং কনশাস মেশিনের মধ্যে পার্থক্য অনেক। একটি কনশাস মেশিনের নেক্সট একশন প্রিডিক্কট করা যায় না কারন কনশাসনেস আনপ্রেডিক্টেবল এটা অনেক ভ্যারিয়েবলের উপর নির্ভর করে। মানুষের চেতনা(কনশাসনেস) আছে, ধরা যাক আপনার কাছে একজন ব্যক্তির নাম দিয়ে বলা হয় সে এই খারাপ কাজ করেছে, তাই তাকে ১০০ বছরের জন্য জেলে পাঠাতে হবে। আপনি চাইলে তার সাজার মেয়াদ কমাতে পারেন অথবা বাড়াতে পারেন। এবার মনে করা যাক যাকে আপনি সাজা দিচ্ছেন তাকে আপনি দেখেন নি, শুধুমাত্র তার নাম আপনি জানেন এবং এই নামে তার লিঙ্গ প্রকাশ পায়নি এমনকি তার বয়স কত তাও আপনি জানেন না, এক্ষেত্রে আপনি কি রায় দিবেন? এবার আরো ভ্যারিয়বল হিসাবে যুক্ত করা যায়, যেমন সে যে কাজটি করেছে তা আপনার হিসাবে তেমন খারাপ কাজ না কিন্তু অন্যদের হিসাবে অনেক খারাপ কাজ, এক্ষেত্রে আপনি কি রায় দিবেন? আপনি যে রায় দিবেন সেটা কেউ কি আগে জানতে পারবে?
আমাদের জীবন সহজ করতে কোন আনপ্রেডিক্টেবল ইন্টেলিজেন্ট মেশিনের দরকার নেই আমাদের দরকার প্রেডিক্টেবল ইন্টেলিজেন্ট মেশিন। আনপ্রেডিক্টেবল ইন্টেলিজেন্ট মেশিন আমাদের জীবন সহজ করতে পারবে না কিন্তু প্রেডিক্টেবল ইন্টেলিজেন্ট মেশিন তা পারবে।