ধর্ষণ এবং আমরা…

নিউজ সাইট আর খবরের কাগজ পড়লে জানা যায়, কোথাও না কোথাও চোর বা ডাকাত সন্দেহে একজন বা কজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে জনতা। আমি বোঝার চেষ্টা করি চোর বা ডাকাত কি এমন করেছে যে তাদেরকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে, কিন্তু সেটা কোন দিন বুঝে উঠি না। এদিকে সারাদেশে এত ধর্ষক, এদের নামে এত অভিযোগ, কিন্তু আমরা এদেরকে পিটিয়ে মেরে ফেলি না, আমরা এদের দোষ আছে কি নেই তা নিয়ে মাতামাতি করি। আবার অনেকেই নিয়মিত এদের মাঝে যে ১-২% শতাংশ জেলে বা বিচারাধীন আছে তাদের মুক্তির জন্য মিছিল করি।

ফান ফ্যাক্ট: “ধর্ষক শুধুমাত্র প্রলোভনে পড়ে ধর্ষণ করে”, এই ফান ফ্যাক্ট আমরা জানতে পারি আমাদের সমাজের গুনী (?) এবং বাকী সবার মতামত থেকে। ধর্ষিতা পর্দা করেনি, রাতে কেন বের হয়েছে, চরিত্র খারাপ, খারাপ ফ্যামিলি, ইচ্ছে করে মিথ্যে বলছে ইত্যাদি আমাদের নিত্য ব্যবহৃত অজুহাত। আবার কেউ কেউ আরো এক দু কাঠী সরেস, তারা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে এই ধর্ষণ সমস্যার সমাধান করতে চায়।

ইদানীং আরো বেশ কিছু খবর দেখা যাচ্ছে, “কেউ ইন্টারনেটে ধর্ম বা রাজনীতিবিদদের বিপরীতে কোন মন্তব্য করেছে, পুলিশ তাদেরকে অভিযোগের ১-১২ ঘণ্টার মাঝে গ্রেপ্তার করে ফেলছে”। কিন্তু দুঃখ এখানেই, একজন ধর্ষিতা কখনো এই দ্রুত গ্রেপ্তার দেখতে পায় না। তাকে আগে পুলিশে অভিযোগ করতে হয়, এরপর পুলিশ যদি মামলা নেয় তারপর মেডিক্যাল টেস্ট করতে হয়, এরপর মামলার খবর ধর্ষক জানতে পারে তারা প্রথমে হুমকি দেয় মামলা তুলে নিতে, তারপর আমাদের রাজনীতিবিদরা সেই হুমকিতে যুক্ত হন, তারা স্যাটেলম্যান্ট করেন, সেটা না পারলে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করেন, আর ধর্ষিতা এই সব পার করে যদি বিচারের জন্য আসতে পারেন তবে আমরা ধর্ষিতার চরিত্র আর তার পোশাক ঠিক ছিলো কিনা তা নিয়ে গবেষণা করি, আর ধর্ষককে কিভাবে মুক্ত করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করি। এইতো গেলো যারা সাহস করে অভিযোগ করেছেন তাদের কথা, কিন্তু যারা সেই সুযোগ পাননি বা যাদের পরিবার এই ঘটনা চেপে যেতে চাপ দিয়েছে তাদের কথা কে জানে? মনে রাখবেন, যারা সুযোগ পাননি তারা কিন্তু জীবিত নেই।

একটি ব্যাপার খুব ভালো করে মাথায় রাখবেন, জেনে বুঝে যৌন সম্পর্কে জড়ানো আর জোর পূর্বক কারো শরীর ভোগ করা এক নয়। এবার সে আপনার স্ত্রী, প্রেমিকা বা অন্য যেই হোক না কেন, তার অনুমতি ব্যতীত তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা ধর্ষণ। পুরুষ হিসাবে আপনার একটাই অধিকার আছে সেটা হচ্ছে অনুমতি চাওয়া, আর কোন অধিকার আপনার নেই। দয়া করে ধর্ষকের পক্ষে আর মেয়েদের ভুল সময়ে চলাফেরা জাতীয় মতামতের পক্ষে যারা আছেন তারা ধর্ষিতার যায়গার আপনার প্রিয় মাকে, স্ত্রীকে, বোনকে আর আপনার প্রাণের প্রিয় কন্যা সন্তানকে চিন্তা করুন। দয়া করে তাদের জন্য হলেও এই অসুস্থ চিন্তা মাথা থেকে বের করুন এবং একটু প্রতিবাদ করুন।

আজ পহেলা বৈশাখ, কিন্তু বাঙ্গালী বা বাংলাদেশি হিসাবে নিজেকে শুধু অপরাধীই মনে হচ্ছে, অন্য কিছু না। আমি কোন ধর্ষিতার কাছে ক্ষমা চাই না, আমি শুধু ন্যায় বিচারটা চাই আর কিছু না। দয়া করে ন্যায় বিচারটুকু দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.